রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – রবার্ট টি কিয়োসাকি

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – রবার্ট টি কিয়োসাকি-


চলুন তাহলে জেনে নেই ‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’ এর মূল শিক্ষাগুলো-

পুরো বইয়ে রবার্ট কিওসাকি মূলত তাঁর নিজের বাবা (পুওর ড্যাড) ও তাঁর বন্ধু মাইক এর বাবা (রিচ ড্যাড) এর দুই ধরনের চিন্তা ও কাজ কারাকে তুলনা করেছেন। পুওর ড্যাড দারুন শিক্ষিত ও সম্মানিত একজন মানুষ হলেও, তিনি আসলে মধ্যবিত্ত চিন্তায় আটকে ছিলেন। অন্যদিকে রিচ ড্যাড ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারতেন। তিনি ঝুঁকি নিতে ভয় পেতেন না।

রিচ ড্যাড যখন রবার্টকে শিক্ষা দেয়া শুরু করেন, তিনি কিন্তু তখন ধনী ছিলেন না। একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে, স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকতেন। তখন তিনি কেবল তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন। এই কারণে রবার্ট ও মাইক রিচ ড্যাডের ধনী হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া চোখের সামনে দেখেছিলেন, সেসাথে রিচ ড্যাড প্রায়ই দুই ছেলেকে ধনী হওয়ার বিষয়ে লেকচার দিতেন। তিনি বলতেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষা অবশ্যই দরকার আছে। এই শিক্ষা মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে শক্তিশালী করে, কিন্তু এর সাথে আর্থিক শিক্ষাওর প্রয়োজন রয়েছে। সত্যিকার আর্থিক শিক্ষা না থাকলে একজন মানুষ সারাজীবন অন্যের ক্রীতদাস হয়ে কাটাতে হয়। মানে দাসত্বের তার জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অন্য মানুষ ধনী হবে, কিন্তু সে নিজে ধনী হতে পারবে না।

রিচ ড্যাডের মতো পুওর ড্যাডও রবার্ট কিওসাকিকে জীবনে বড়ো হওয়ার বিষয়ে লেকচার দিতেন। সেসব ছিলো ভালো শিক্ষা অর্জন করে একটি নিরাপদ চাকরি পাওয়ার বিষয়ে। পুওর ড্যাড ছেলের সাথে টাকা পয়সা বিষয়ে আলোচনা করতে চাইতেন না। অন্যদিকে রিচ ড্যাড ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের টাকা পয়সার বিষয়ে সচেতন করার পক্ষে ছিলেন।

এই দু’জন বাবার স্বভাব চরিত্র নিয়ে বইয়ের পুরো একটা চ্যাপ্টারই আছে। চলুন আগে সেই চ্যাপ্টার অনুসারে দুই বাবার চিন্তার ধরণ আরেকটু ভালো করে জানি।

পুওর ড্যাড (গরীব বাবা)

গরীব বলতে যা বোঝায়, পুওর ড্যাড সেই অর্থে গরিব ছিলেন না। তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন, এবং তাঁর মাসিক আয় যথেষ্ঠ ভালো ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর মধ্যবিত্ত মানসিকতার কারণে, সে টাকা কাজে লাগিয়ে বড়ো কিছু করতে পারেননি। সারাটা জীবন তাঁর টাকা নিয়ে টেনশন করেই কেটেছে।

এই চরিত্রটি আসলে সেসব কোটি কোটি বাবার চরিত্র, যাঁরা নিজের সন্তানকে ভালোমতো পড়াশুনা করে একটি ভালো চাকরি করতে উৎসাহ দেন।

পুওর ড্যাড এর চাওয়া ছিল, রবার্ট যেন ভালোমতো পড়াশুনা শেষ করে একটি ভালো কোম্পানীতে বা সরকারের হয়ে কাজ করেন। রবার্ট যখন একটি ভালো কোম্পানীর মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামলেন, তখন পুওর ড্যাড খুবই হতাশ হন।

পুওর ড্যাড শিক্ষাকে দেখতেন সফল হওয়ার টিকেট হিসেবে। তাঁর একটি ডক্টরেট ডিগ্রী ছিল, এবং তিনি সবসময়ে বলতেন, “টাকার ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই”, “টাকা কোনো জরুরি বিষয় নয়”।

তিনি আরও বলতেন, “পৃথিবীর সব খারাপের মূলে রয়েছে টাকা”।

কিন্তু সত্যি কথা বলতে, তিনি সারাটা জীবন টাকার জন্যই কষ্ট করেছেন, কিন্তু কোনো দিনই যথেষ্ঠ টাকা হাতে রাখতে পারেননি।

রিচ ড্যাড (ধনী বাবা)

লেখক তাঁর বই এর ভেতরে লিখেছেন, ৯ বছর বয়সেই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর নিজের বাবার চেয়ে রিচ ড্যাডের কথাগুলো অনেক বেশি সঠিক। পুওর ড্যাড কোনো কিছু দিতে না পারলে বলতেন, “আমার পক্ষে এটা দেয়া সম্ভব না”; আর রিচ ড্যাড বলতেন, “এটা দেয়ার জন্য কি করা যায়?”। রিচ ড্যাড ছিলেন আশাবাদী ও সাহসী একজন মানুষ।

রিচ ড্যাড বিশ্বাস করতেন, যদি একজন মানুষ চাকরিও করে, তবুও সে যেন নিজের জন্যই কাজ করে। তবেই সে উন্নতি করতে পারবে। চাকরিকে শুধু টাকা কামানোর উপায় হিসেবে না দেখে, কাজ শেখার জায়গা হিসেবে দেখতে হবে। তবেই সে সত্যিকার কাজ শিখতে পারবে, এবং পরে সে দক্ষতা নিজের কাজে লাগাতে পারবে।

দামী কোনো কিছু দরকার হলে নিজেকে বলা যাবে না যে, “আমি এটা কিনতে পারবো না”। তার বদলে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “এটা কিনতে হলে আমাকে কি করতে হবে?”

তিনি বলতেন, ধনী হতে হলে প্রথমেই সাহসী আর আশাবাদী হতে হবে। তোমার লক্ষ্য থাকবে, টাকার জন্য যেন অন্য কোনো মানুষের ওপর তোমাকে নির্ভর করতে না হয়।

নিজেকে এমন ভাবে গড়তে হবে, যেন টাকার জন্য মানুষ তোমার ওপর নির্ভর করে। নিজের পকেটে অল্প টাকা ভরে অন্যের পকেটে অনেক টাকা ভরার বদলে, অন্যের পকেটে অল্প টাকা দিয়ে নিজের পকেটে বেশি টাকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। পুঁজিবাদ খারাপ কিছু নয়, যাদের নিজের চেষ্টায় কিছু করার যোগ্যতা নেই, তারাই পুঁজিবাদকে খারাপ বলে। চাইলে যে কেউ পুঁজিবাদকে কাজে লাগিয়ে বড়ো লোক হতে পারে। কিন্তু সেই কষ্টটা বেশিরভাগ মানুষ করতে চায় না। আর এসব স্কুল কলেজেও শেখানো হয় না।

তাঁর মতে, গরীবরা সারাজীবন গরীব থেকে যাওয়ার একটি বড়ো কারণ হলো, তারা সব সময়ে টাকার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে। তারা বিশ্বাস করে ধনীর টাকায় তাদের অধিকার আছে; এবং যাদের বেশি টাকা, তাদের উচিৎ সেই টাকা থেকে গরিবদের সাহায্য করা। যদিও এটা ধনীদের দায়িত্ব। কিন্তু এই চিন্তার কারণে গরিবরা নিজের চেষ্টায় ধনী হওয়ার কথা ভাবে না। তাই কাজও করে না, ধনীও হয় না। তিনি বলতেন “টাকার অভাবই হলো পৃথিবীর সব খারাপের মূল”।

৬টি মূল লেসন বা শিক্ষা

পুরো বইটিতে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে বের হয়ে ধনী মানসিকতা তৈরির জন্য মোট ৬টি লেসন বা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

লেসনগুলো হলো:

১. ধনীরা টাকার জন্য খাটে না, টাকা তাদের জন্য খাটে

২. আর্থিক শিক্ষা কেনো প্রয়োজন

৩. নিজের ব্যবসা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে

৪. ট্যাক্স এবং কর্পোরেশনের ব্যবহার

৫. ধনীরা কিভাবে টাকার জন্ম দেয়

৬. টাকার জন্য কাজকরার বদলে শেখার জন্য কাজকরা কেনো প্রয়োজন।

এই ৬টি লেসন লেখক মোট ১০টি চ্যাপ্টার বা অধ্যায়ে দিয়েছেন। চলুন এই বই এর মূল বিষয় ও শিক্ষাগুলো সারাংশ আকারে দেখি:

যেভাবে শুরু হলো:

বইয়ের শুরুতে রবার্ট কিওসাকি গল্পের মত করে দুই বাবার মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছেন। দুই বাবার মধ্যে যে তুলনা আমরা এই লেখার প্রথমে দিয়েছি- সেটাই আসলে প্রথম অধ্যায়ের বিষয়বস্তু। তবে গল্পটা কিভাবে শুরু হলো, সে বিষয়ে একটু ধারণা নিয়ে নেয়া যাক :

রবার্ট কিওসাকি ও তাঁর বন্ধু মাইক যখন স্কুলে পড়তেন, তখন দেখতেন, তাঁদের সহপাঠীদের পোশাক আশাক, নতুন সাইকেল, গাড়ি— ইত্যাদি সবই ধনীদের মত। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, ধনী হতে গেলে অনেক টাকা দরকার।

রবার্ট তাঁর নিজের বাবা, অর্থাৎ পুওর ড্যাডকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কিভাবে টাকা বানানো যায়?”- রবার্টের বাবা জনাব কিওসাকি সিনিয়র, এই কথা মাইকের বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন, যদিও মাইকের বাবা মানে আমাদের ‘রিচ ড্যাড’ তখনও অতটা বড়োলোক হননি, কিন্তু তাঁর কাজ কারবারে বোঝা যাচ্ছিল তিনি এক সময়ে সেই অঞ্চলের সেরা ধনী হতে চলেছেন (এবং তা তিনি হয়েছিলেন)।

রিচ ড্যাড

৯ বছরের বালক মাইক ও রবার্ট মিলে মাইকের বাবার সাথে দেখা করে তাদের ধনী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানায়, রিচ ড্যাড নিজের ছেলে মাইক, ও ছেলের বেস্ট ফ্রেন্ড রবার্টকে শেখাতে শুরু করেন। এবং তখন থেকে রবার্ট কিওসাকি তাঁর বাবা মি. কিওসাকি সিনিয়রের সাথে রিচ ড্যাডের পার্থক্যগুলো বুঝতে শুরু করেন। সেই সাথে বুঝতে শুরু করেন ধনী মানুষ আর সাধারণ মানুষের কাজ ও চিন্তা করার ধরন অনেক আলাদা।

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – ১

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – ২




a
Copy Success

Post a Comment

Previous Post Next Post